নিজস্ব প্রতিবেদক, জকিগঞ্জ টুডে:: সিলেটের জকিগঞ্জে সিল মারা ব্যালট পেপারসহ গ্রেফতার হওয়া রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুল হকের সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রোববার রাষ্ট্রপক্ষ বাদী হয়ে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ আপিল মামলা দায়ের করা হয়। আপিল মামলা নং ৩৫১/২০২৩ ইং। এরআগে গত ৬ জুলাই জকিগঞ্জ জকিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শ্যামকান্ত সিনহা রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুল হককে দায়েলকৃত মামলা থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।
২০২২ সালের ৫ জানুয়ারী জকিগঞ্জের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিনে সিলেটের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম ও তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম এবং সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিয়ার উপস্থিতিতে কাজলসার ইউনিয়নের মরিচা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুল হককে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আটক করা হয়।
তখন ওই দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার গাড়ি তল্লাশি করে সিলমারা ১ হাজার ২০০ ব্যালেট পেপার এবং সিলবিহীন ৪৫৬ ব্যালেট পেপার, নগদ ১ লক্ষ ২১ হাজার ৫শ টাকা, ব্যালেট বাক্সের সিলগালা লক ৮টি, ৪টি মোবাইল ফোনসেট, একটি ফেনসিডিল বোতল, বিভিন্ন চেয়ারম্যান প্রার্থী, সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যের প্রতীকের সীল মারা ৪০০ করে মোট ১ হাজার ২০০ ব্যালটে উদ্ধার করা হয়। এরপর তাৎক্ষণিকভাবে কাজলাসার ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে সুলতানপুর ইউপির গণিপুর কেন্দ্রের ব্যালট ছিনতাই হওয়ায় ওই কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত হয়।
এ ঘটনায় জকিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন মরিচা ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা ও জৈন্তাপুর থানার এএসআই মো. আব্দুল হাকিম। এ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদমান সাকিব ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হককে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। নজিরবীহিন এ ঘটনায় সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে নির্বাচন কমিশন দু’জনকেই সাময়িকভাবে চাকুরিচুত্য করে। ২০২২ সালের ১২ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা জকিগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) উজায়ের আল মাহমুদ আদনান আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ মামলায় বিচারিক আদালতে সাক্ষ্য দেন সিলেটের তৎকালীন পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ শুকুর মাহমুদ মিয়াসহ ১৭ জন। উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাদমান সাকিব জকিগঞ্জ সদর, সুলতানপুর ও বারঠাকুরী ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুল হক কাজলসার ও বারহাল ইউনিয়নের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন। নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকেই তাঁদের আচরণ সন্দেহজনক ছিল এমন গোয়েন্দা তথ্য পেয়ে তাদেরকে আটক করা হয়েছিলো বলে তখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তাগণ গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন।
সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন জানান, জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ সিলেটের পুলিশ সুপার, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার উপস্থিতিতে সিজার লিস্ট করা হয়। মামলায় আদালতে উপস্থিত হয়ে সিলেট তৎকালীন পুলিশ সুপার ও বর্তমান অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন পিপিএমসহ ১৭ জন সাক্ষী দিয়েছেন। বহুল আলোচিত এ মামলার রায়ে আসামীরা খালাস পাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক মনে হয়েছে তাই রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আপিল দায়ের করেছে।
Leave a Reply